Monday, January 6, 2014

এক দিন কিছু লোক এক অন্ধকার টানেল অতিক্রম করে যাচ্ছিল। হঠাৎ পায়ের তলায় সূচাল পাথর জাতীয় কিছু অনুভব করল তারা। এদেরকেউ কেউ তখন সে পাথরগুলো তুলে পকেটে ভরে নি --- অন্যরা যেন কষ্ট না পায় এই ভাল নিয়তেই তারা এটা করেছিল। কেউ কিছু নিল, আর কেউ নিলই না। অবশেষে যখন অন্ধকার টানেল থেকে বের হল, দেখল তাদের কুড়ানো পাথরগুলো ছিল ডায়মন্ড/হীরা- তারা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল। যারা কম নিয়েছিল তাদের বেশ আফসোস হচ্ছিল যে কেন আরও বেশি তারা তুলে নিল না; আর একেবারেই যারা নেয় নি তারা আরও বেশ অনুশোচনা করতে লাগলো। এই দুনিয়া ঠিক এই অন্ধকার টানেলের মতই। আর এখান কার ভালো কাজগুলো ডায়মন্ডের মত.. আখেরাতে যাদের ভালো কাজের পরিমাণ কম হবে, তারা আফসোস করতে থাকবে কেন আরও ভালো কাজ তারা দুনিয়ায় করেনি!!!




"হারামজাদা তুই কুত্তার মরা মরবি"



হলে আমাদের পাশের রুমে থাকতেন ম্যাথ এর কুসুম আপু। আমাদের দেখামতে খুব শান্ত এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাযি একজন মেয়ে। পড়াশুনা, রান্না সবকিছুতেই সে ছিল সমান পারদর্শী। আপুর প্রেম ছিল ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের ফাইনাল ইয়ারের সুমন ভাইয়ের সাথে। তাদের রিলেশান ছিল প্রায় চার বছরের মত। প্রায়ই আপুকে দেখতাম ভাইয়ার জন্য এটা ওটা রান্না করে নিয়ে যেত। আপুকে লাল ড্রেস ছাড়া অন্য সব কালার খুব কমই পড়তে দেখেছি। কারন ভাইয়ার প্রিয় রং নাকি ছিল লাল। সুমন ভাইয়া পাশ করে বের হল গত বছর। কিন্তু CGPA খারাপ থাকার কারনে অনেক চেষ্টা করেও কোথাও চাকরি পাচ্ছিল না। সেই সময়গুলোতে কুসুম আপুর রুমে গেলে প্রায়ই দেখতাম জায়নামাযে বসে কান্নাকাটি করছে। একদিন কারন জানতে চাইলে মিষ্টি করে হেসে উত্তর দিলঃ "আসলে তোমাদের ভাইয়ার চাকরি হচ্ছে না তো তাই অনেক টেনশানে থাকি" এর কিছুদিন পরেই শুনলাম সুমন ভাইয়ার মন্ত্রনালয়ে ভাল একটা জব হয়েছে।
সেদিন চোখের সামনে আপুর খুশি দেখে কি যে ভাল লাগছিল! আমাদের তিন বান্ধবীকে আপু সেদিন ক্যান্টিনে নিয়ে খাওয়ালেন। এর কিছুদিন পরের ঘটনা...
কুসুম আপুর রুম থেকে বিলাপের শব্দ শুনে আমরা কয়েকজন দৌড়ে গেলাম। গিয়ে দেখি আপু দেয়ালে মাথা ঠুকছেন আর চিত্কার করে করে বলছেন,
"আল্লাহ তুমি এর বিচার কর। আমি এখন কি করব? কার কাছে বিচার চাইব?"
ওনার কান্না দেখে চোখের জল আটকে রাখতে পারছিলাম না। তবে উনি তত্ক্ষনাত কিছুই বলেনি। এর দুই তিনদিনের মধ্যেই খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়ে আপু পুরোপুরি শয্যাশায়ী।
আপুর কাছ থেকে যেটুকু জানতে পারলাম সেটা হল, আপুর সাথে রিলেশান থাকা অবস্থায় সুমন ভাই রুমা নামের এক মেয়ের সাথে প্রায় একবছর ধরে রিলেশান চালিয়ে যাচ্ছিল। এবং সেটা কুসুম আপুর অগোচরে। রুমা সুমন ভাইয়ার ফোন থেকে আপুর নাম্বার চুরি করে ফোন দিয়ে কুসুম আপুকে তাদের এক বছরের রিলেশানের কথা জানিয়ে দেয়। সুমন ভাইয়া এমনই কর্পোরেট পাবলিক ছিল যে ধরা খাওয়ার পরেও সগর্বে দুই রিলেশান চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। এবং ফোন দিয়ে প্রায়ই কুসুম আপুকে ইমোশোনাল ডায়লগ ছাড়ত।
আপু যেহেতু সুমন ভাইকে অনেক ভালবাসত তাই সে বুঝতে পারছিল না তার এখন কী করা উচিত। আপু ডুকরে কেঁদে জিগেস করল, "এই সিচুয়েশানে আমার কী করা উচিত?"
তখন আপুকে বললাম, "আপনি ভাইয়ার সাথে ফাইনালি কথা বলে স্ট্রিক্টলি  ব্রেক আপ করে দেন"
আপু ডিসিশান নিল ভাইয়ার সাথে দেখা করবে। সিদ্ধান্তমত পরদিন আপু ক্যাম্পাসে ভাইয়াকে দেখা করার জন্য ডাকে। সৌভাগ্যবশত আমরা তিনজনও আপুর সাথে গেলাম। আপু আর ভাইয়া দিঘীর পাড়ে কথা বলছিল আর আমরা তিন বান্ধবী একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকলাম। হঠাত্ দেখি কুসুম আপু কষে সুমন ভাইকে একটা থাপ্পড় মারলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা তিনজন তখন থ!! 

এরপর আপু হন্তদন্ত হয়ে কাঁদতে কাঁদতে চলে আসছিল। কিছুদূর আসার পর কী মনে করে আবার পিছন ফিরল। যা দেখলাম তাতে আপুকে সাব্বাশ না দিয়ে পারলাম না। দেখলাম আপু তার হিল জুতা খুলে সজোড়ে ভাইয়ার দিকে ঢিল মারল আর বলল, "হারামজাদা তুই কুত্তার মরা মরবি" সাব্বাশ কুসুম আপু।




















 

No comments:

Post a Comment